Thursday, February 28, 2008

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবিতে শতাধিক নিহত


বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবিতে শতাধিক নিহত : ৩০ লাশ উদ্ধার বুড়িগঙ্গা নদীতে ট্রলারের ধাক্কায় যাত্রীবাহি লঞ্চ ডুবে শতাধিক যাত্রীর সলিল সমাধি হয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে৷ সন্ধ্যায় ৮ শিশু, ১৪ মহিলাসহ ৩১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ গতকাল বিকালে বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর ( চীন মৈত্রী সেতু-১) পশ্চিম পাশে এ ঘটনা ঘটে৷ ঢাকার সদরঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের বালিগাঁও যাওয়ার পথে সৌরভ-১ নামের দোতলা লঞ্চটিকে পেছন থেকে একটি বালুবাহী ট্রলার ধাক্কা দিলে লঞ্চটি কাত হয়ে মুহর্ূর্তের মধ্যে ডুবে যায়৷ লঞ্চে দুই শতাধিক যাত্রী ছিল৷ ঘটনা তদনত্মে পাঁচ সদেস্যর তদনত্ম কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ নৌ পরিবহন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম এ মতিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজে অংশ নেয় সেনাসদস্য, দমকল, কোস্টগার্ড, র্যাব ও পুলিশ৷ ট্রলারটি আটক করা হয়েছে৷ চালকসহ অন্যরা পালিয়ে গেছে৷ নিহতদের মধ্যে ১৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে৷ এরা হচ্ছেন মিনাৰী (৩০), তার দুই মাসের ছেলে জোনাক ও মেয়ে কুহেলী (৩), নয়ন (২৬), বিউটি আক্তার (২৭), স্বামী মোশারফ হোসেন, তার আড়াই বছরের শিশু কন্যা ছোঁয়া, গ্রাম মুক্তারপুর, মুন্সিগঞ্জ, লিপি আক্তার (২৫), স্বামী মানিক মিয়া, কাউলাইল, ফতুলস্না, রণজিত ঘোষ (৫০), পিতা জীবন ঘোষ, নিতাইবাজার, মুন্সিগঞ্জ, আরাফাত (৫), মনোয়ারা (৫০), জয়নব (৪২) ও আনোয়ারা বেগম (৫৫), স্বামী ইসমাইল হোসেন, গ্রাম ধামালি, মুন্সিগঞ্জ, ফরহাদ হোসেন( ৬) পিতা আশরাফ হোসেন, গ্রাম রাধানগর, ফতুলস্নাহ, সুুকুমার (৫০) ও তার ছেলে নয়ন পাল (২৬), ১১/১১ লালমোহন পোদ্দার লেন, ঢাকা, আনেয়ারম্নল ইসলাম (৪০) গ্রাম অমৃতপুর, কেরানীগঞ্জ, হেলাল মিয়া (১২) পিতা লতিফ ফকির, জাঙ্গাইল, বরিশাল, আবদুল হাকিম (৪০), পিতা বিলস্নাল হোসেন, রামনগর, ফতুলস্না, নামজা (২৭), জয়নব (৩৫), শ্রীকৃষ্ণ (৩০), রোকেয়া (৫০), আলম (৩৫), আকলিম (৩৬), জরিনা (৫০)৷ দৰিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতর্া সেলিম সাজ্জাম জানান, পরিচয় পাওয়া লাশগুলো তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছে৷ প্রত্যৰদশর্ী পুলিশ সদস্য ফারম্নক হোসেন জানান, বেলা ৩টার দিকে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে সৌরভ-১ লঞ্চটি সদরঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের বালিগাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়৷ বৃহস্পতিবার থাকায় অন্যান দিনের চেয়ে যাত্রীসংখ্যা বেশি ছিল৷ লঞ্চটি বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর কাছে (ঢাকা জুট মিল ও পোসত্মগোলা শ্মশানের মাঝামাঝি) পেঁৗছালে পেছন থেকে দ্রম্নতগতিতে আসা মেসর্াস ইব্রাহিম শিপিং লাইনের বালুবাহী বলগেট 'আল আমিন 'সৌরভ-১ লঞ্চের পেছনদিকে থেকে সজোরে ধাক্কা দেয়৷ সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি ঘুরে যায়৷ এরপর পশ্চিমদিকে হেলে পড়ে মুহর্ূতের মধ্যে ডুবে যায়৷ প্রত্যৰদশর্ী লিটন জানান, লঞ্চের দোতলায় থাকা ৬০/৭০ জন যাত্রী নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠতে সৰম হয়৷ লঞ্চের ভেতরে থাকা যাত্রীদের মধ্যে দুই-একজন ছাড়া কেউ বের হতে পারেননি৷ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া লঞ্চযাত্রী রিতা বেগম জানিয়েছেন, শাশুড়ি ও শিশু সনত্মানকে নিয়ে তিনি বালিগাঁও যাচ্ছিলেন৷ লঞ্চ ডুবে যাওয়ার সময় তারা ভেতরে আটকে পড়েন৷ তিনি বলেন, 'আমি ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করতে থাকি৷ এক পযর্ায় জালানা দিয়ে বের হতে সৰম হই৷ পরে স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে৷' দুর্ঘটনায় নিহত রিতার শাশুড়ির লাশ উদ্ধার করেছে দমকল কমর্ীরা৷ মুমূর্ষু অবস্থায় সনত্মানকে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে৷ প্রাণে বেঁচে যাওয়া দেলোয়ারা বেগম (৪০) জানান, তিনি ১১ বছরের নাতি জীবনকে নিয়ে মেয়ে জোসনার ফতুলস্নার বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন৷ তিনি প্রথমে জীবনকে জানালা দিয়ে নদীতে ফেলে দেন৷ এরপর তিনিও ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ স্থানীয় লোকজন নৌকা যোগে তাদের উদ্ধার করে৷ তিনি বলেন লঞ্চের নীচ তলায় শতাধিক যাত্রী ছিল৷ এদের মধ্যে ৩০/৪০ জন নারী ও শিশু ছিল৷ কেরানীগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার নূর আহমদ জানান, সন্ধ্যা পর্যনত্ম দমকল বাহিনীর ডুবুরীরা লঞ্চের ভেতর থেকে ৩১টি লাশ উদ্ধার করেছে৷ নৌ-পরিবহন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এমএ মতিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷ তিনি নিহতদের স্বজনদের সানত্ম্বনা ও ৰতি পূরণের আশ্বাস দেন৷ নদীর দুই তীরে লঞ্চ যাত্রীদের স্বজনসহ অসংখ্য মানুষ ভিড় করে৷ দমকল বাহিনীর ডুবুরীরা একেকটি লাশ উদ্ধারের পরপরই স্বজনদের আহাজারি চলছে৷ দমকলের ডুবুরী আবুল খায়ের জানান, আমরা কেবল লঞ্চের বাইরে থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করতে পেরেছি৷ ভেতর বিশেষ করে কেবিনে অনেক লাশ থাকার আশংকা রয়েছে৷ উদ্ধার কাজ বলগেট আল আমিনের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া সৌরভ-১-এর হতভাগ্য যাত্রীদের মৃতদেহ উদ্ধারে দমকল বাহিনীর একদল ডুবুরী প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ সন্ধ্যা পর্যনত্ম ৩১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করলেও নদীর গভীরতা ও পানি ঠাণ্ডা থাকায় ডুবুরীদের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল৷ ডুবুরীরা জানিয়েছেন, তাদের ধারণা লঞ্চের ভেতর আরো অনেক লাশ রয়েছে৷ সন্ধ্যা পর্যনত্ম বিআইডবিস্নউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পেঁৗছেনি৷ পেঁৗছেছে উদ্ধারকারী দল৷ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিআইডবিস্নটি'র চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান হাওলাদার ঘটনাস্থলে যান৷ তিনি সাংবাদিকদের জানান, চার সদস্যের উদ্ধারকারী একটি ডুবুরী দল রওনা হয়েছে৷ এছাড়া নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাট থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ 'রম্নসত্মম' বিকাল ৫টায় রওনা হয়েছে৷ তিনি ঘটনার জন্য তদনত্ম কমিটি গঠনসহ নিহত প্রতিজনের জন্য ২০ হাজার টাকা ৰতিপূরণ প্রদানের কথা বলেন৷ ঘটনার পর থেকে ঢাকার পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে দমকল বাহিনীর ডুবুরীরা মৃতদেহ উদ্ধার কাজ শুরম্ন করে৷ উদ্ধার কাজে র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড সদস্যরা ছাড়াও পোসত্মগোলার সেনাসদস্যরা অংশ নেয়৷ দমকল বাহিনীর উদ্ধারকারী দল কাজ শুরম্ন করে বিকাল ৪টার দিকে৷ তবে পানির গভীরতা ও ঠাণ্ডার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে ডুবুরীরা জানিয়েছেন৷ রাত ৯টা পর্যনত্ম উদ্ধারকারী জাহাজ 'রম্নসত্মম' ঘটনাস্থলে পেঁৗছেনি৷ তদনত্ম কমিটি গঠন বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনা তদনত্মে সরকার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এমএ মতিনকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদনত্ম কমিটি গঠন করেছে৷ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিআইডবিস্নউটিএ'র সচিব, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এবং ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার৷ কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদনত্ম রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শোক বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরম্নদ্দীন আহমদ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন৷ রাষ্ট্রপতি তার বিবৃতিতে উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার এবং আহতদের দ্রম্নত চিকিত্‍সা সেবা প্রদানের জন্য সংশিস্নষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন৷ তিনি নিহতদের রম্নহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসনত্মপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন৷ প্রধান উপদেষ্টা তার বিবৃতিতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসনত্মপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান৷ তিনি আহতদের সুচিকিত্‍সা নিশ্চিত এবং দ্রম্নত উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য সংশিস্নষ্টদের নির্দেশ দেন৷ এছাড়া স্থায়ী কমিটি মনোনীত বিএনপি'র অস্থায়ী মহাসচিব হাফিজউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন৷ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি প্রদানের দাবি জানান৷

No comments: